মনুস্মৃতি ও বর্ণ ব্যবস্থা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 June, 2020

মনুস্মৃতি ও বর্ণ ব্যবস্থা

মনুস্মৃতি ও বর্ণ ব্যবস্থা
মনুস্মৃতি কে সৃষ্টি মধ্যে নীতি এবং ধর্মের (কানুন) নির্ধারন কারী সবচেয়ে প্রথম গ্রন্থ মানা হয়। এবং সেই সময় জন্মগত জাতিব্যবস্থার প্রথা ছিলো না। মহর্ষি মনুও জন্মগত ভাবে সিদ্ধ জাতিব্যবস্থার সমর্থন করে নি।মনু মহারাজ মানুষের গুন কর্ম স্বভাবের উপর আধারিত সমাজ ব্যবস্থা রচনা করার জন্য উপদেশ করেছে। এবং ইহাই সঠিক বর্ণ ব্যবস্থা।
বর্ণ শব্দটি “বৃঞ” ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ চয়ন বা নির্ধারন করা। এবং কর্ম এবং গুন দ্বারা বর্ণ নির্ধারিত হবে ইহাই ছিলো মনুর বিধান। কিন্তু বর্তমানে জন্মগত ভাবে বর্ণপ্রথা চালু রয়েছে। যা মনু কখনোই স্বীকার করে নি। উচ্চ বংশে জন্মগ্রহনকারীরা সব সময় নিম্ম বর্ণের মনুষ্যকে উপেক্ষিত করে চলে।এবং জন্মগত পরিচয়ে নিজেকে অনেক বড় বলে মনে করেন। নিরুক্ত ২।৩ বরণ করাকে বর্ণ বলা হয়েছে।
 মনুস্মৃতি ৩।১০৯ – এ স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ব্রাহ্মণ ভোজনের জন্য স্বীয় কুল গোত্রের পরিচয় প্রদান করিবেন না। ভোজনের জন্য কুল ও গোত্রের পরিচয় করিয়া ভোজন করিলে তাকে উদগীর্ণভোজী বলে। অতএব মনুস্মৃতি অনুসারে, যে ব্রাহ্মণ বা উচু জাতি নিজ গোত্র বা বংশের পরিচয় দিয়ে নিজেকে বড় বলেন। এবং মার সম্মানের অপেক্ষা রাখে, অবশ্যই সে তিরস্কার যোগ্য। . মনুস্মৃতি ২।১৩৬ – ন্যায়সঞ্চিত ধন, পিতৃব্যাদি সমন্ধ্য, বয়োধিকতা, শ্রেষ্ঠ কর্ম, বেদার্থতত্বজ্ঞান রূপ বিদ্যা এই পঞ্চ সম্মানের উত্তরোত্তর মানদন্ড। এই শ্লোকে কোন কুল, জাতি বা বংশ কে সম্মানের মানদন্ড মানা হয় নি। . =>বর্ণের পরিবর্তন – . মনুস্মৃতি ১০।৬৫ – ব্রাহ্মণ ও শুদ্র হতে পারে এবং শুদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারে। এই প্রকার ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যও নিজ নিজ বর্ণ পরিবর্তন করতে পারে। . মনুস্মৃতি ৯।৩৩৫ – শরীর এবং মন দ্বারা শুদ্ধ – পবিত্র এবং উৎকৃষ্ট লোকের সান্নিধ্যে স্থিত। মিষ্টিভাষী, অহংকার রহিত, নিজ থেকে উৎকৃষ্ট বর্ণের সেবাকারী শুদ্রও উত্তম ব্রহ্ম জন্ম বা দ্বিজ বর্ণকে প্রাপ্ত করতে পারে।

ভিডিও টি দেখুন লিঙ্ক 

মনুস্মৃতি মধ্যে অনেক শ্লোক রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ বর্ণের ব্যক্তিও যদি শ্রেষ্ঠ কর্ম না করে তবে সে শুদ্র (অশিক্ষিত) বলে গন্য হবে।
যেমন- . মনুস্মৃতি ২।১০৩ – যে মনুষ্য নিত্য প্রাত এবং সন্ধ্যায় ঈশ্বরের আরাধনা করে না তাহাকে শুদ্র বলে জানবে। . মনুস্মৃতি ২।১৭২ – যে ব্যক্তি বেদের শিক্ষাই দীক্ষিত হয় নি সে শুদ্র তুল্য। . মনুস্মৃতি ২।১৬৮ – যে ব্রাহ্মণ বেদের অধ্যয়ন বা পালন ছেড়ে অন্য বিষয়ে প্রযত্ন করেন সে শুদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়। . মনুস্মৃতি ৪।২৪৫ – ব্রাহ্মণ বর্নস্থ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ অতিশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সঙ্গ করে এবং নিচ থেকে নিচতর ব্যক্তির সঙ্গ ছেড়ে অধিক শ্রেষ্ঠ হয়। ইহার বিপরীত আচরনে পতিত হয়ে সে শুদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়। . অতঃএব ইহা স্পষ্ট যে, ব্রাহ্মণ উত্তম কর্ম কারী বিদ্বান কে বলে। এবং শুদ্রের অর্থ অশিক্ষিত ব্যক্তি। ইহা কোন জন্মগত সমন্ধ্য নয়। . মনুস্মৃতি ২।১২৬ – এমনকি কেন ব্রাহ্মণ হোক, কিন্তু যদি সে অভিবাদনের উত্তর শিষ্টতার সহিত দিতে না জানে, তবে সে শুদ্র। . অর্থাৎ মনু জন্মসিদ্ধ বর্ণ প্রথার সমর্থন করে নি। মনুস্মৃতি অনুসারে মাতা পিতা তার সন্তানদের বাল্যকালে তার রূচি এবং প্রকৃতি জেনে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যের বর্ণের জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত করার জন্য উপদেশ প্রদান করবেন। কোন ব্রাহ্মণ পিতা মাতা যদি তার সন্তান কে ব্রাহ্মণ তৈরী করতে চায় তবে অবশ্যই তার মধ্যে ব্রাহ্মণোচিত গুণ,কর্ম, স্বভাব জাগিয়ে তুলবেন। . মনুস্মৃতি ২।১৫৭ – যেমন কাষ্ঠনির্মিত হস্তি ও চর্ম্মনির্মিত মৃগ কোন কার্যকারক নহে। তদ্রুপ যে ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন না করে তিনিও কোন কার্যক্ষম নহে। কেবল ব্রাহ্মণের নাম মাত্র ধারন করেন। . =>>শিক্ষাই বাস্তবিক জন্ম – . মহর্ষি মনুর মতে মানুষের বাস্তবিক জন্ম বিদ্যাপ্রাপ্তিতেই ঘটে। জন্মত প্রত্যেক মানুষই শুদ্র অর্থাৎ অশিক্ষিত। এবং সংস্কার দ্বারা সে পরিশুদ্ধ হয়ে তার দ্বিতীয় জন্ম হয়। আর একেই দ্বিজ বলে। সংস্কারে অসমর্থ ব্যক্তি শুদ্রই রয়ে যায়। . মনুস্মৃতি ২।১৪৮ – সমস্ত বেদশাস্ত্রের পারদর্শী আচার্য্য অভিজাত বালকের যথাবিধিনুসারে গায়ত্রী উপদেশ করিয়া যে যথার্থ জন্ম উৎপাদন করেন, সে জন্মই ব্রহ্মপ্রাপ্তির কারন বলিয়া অজর ও অমর রূপে গণ্য হয়। . 

মনুস্মৃতি ২।১৪৬ – জন্মদাতা পিতা থেকে জ্ঞান দাতা আচার্য্য অধিক বড় এবং মাননীয়। আচার্য্য দ্বারা প্রদান করা জ্ঞান মুক্তি প্রদান করে। পিতা দ্বারা প্রদত্ত শরীর তো এই জন্মের সাথেই নষ্ট হয়। . =>> শুদ্রের প্রতি ভালো ব্যবহার . মনু পরম মানবীয় ছিলেন। তিনি জানতেন যে, কোন শুদ্র ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারবে না। তারা কোন কারন বশত জীবনের প্রথম ধাপে জ্ঞান এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ জন্য মহর্ষি মনু শুদ্রদের জন্য সমাজে উচিত সম্মানের বিধান করেছেন। তিনি শুদ্রদের প্রতি কখনো অপমান সূচক শব্দ ব্যবহার করেন নি। মনুর দৃষ্টিতে জ্ঞান ও শিক্ষার অভাবে শুদ্র সমাজের মধ্যে সবচেয়ে অসহায়। যা পরিস্থিতির বশ। সে জন্য মনু সমাজে তাদের প্রতি অধিক সহৃদয়তা এবং সহনাভূতি দেখাতে বলেছেন – . মনুস্মৃতি ৩।১১২ – শুদ্র বা বৈশ্য অতিথি রূপে আসলে ব্রাহ্মণ তাকে সম্মানের সহিত ভোজন করাবেন। . মনৃস্মৃতি ৩।১১৬ – আপন সেবক (শুদ্র) কে প্রথম ভোজন করানোর পর দম্পতি ভোজন করবেন। . =>> মনুস্মৃতি বেদের উপর আধারিত . বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান এবং সমস্ত বিদ্যা বেদ থেকেই নির্গত হয়। এবং বেদ কে মেনেই ঋষিরা অন্য সব গ্রন্থ রচনা করেছেন।বেদের স্থান এবং প্রামানিকতা সবার উপরে। এবং অন্যান্য স্মৃতি শাস্ত্রও মান্য যদি সেগুলো বেদানুকুল হয়। এবং বেদ যে ধর্মের মূলে মনু ইহা দৃঢতার সহিত মান্য করতেন। . মনুস্মৃতি ২।৮ – শাস্ত্র সকল জ্ঞানচক্ষু দ্বারা বিশেষরূপে পর্যালোচনা করিয়া বিদ্বানরা বেদমূলক কর্তব্যকর্ম্ম অবগত হইয়া তাহার অনুষ্ঠান করিবেন। . মনুস্মৃতি ২।১৩ – ধর্ম্ম জিজ্ঞাসু ব্যক্তির নিকট প্রকৃষ্ট প্রমাণ বেদ। যেহেতু বেদ ও স্মৃতির অনৈক্যে বেদের মতই গ্রাহ্য হয়। . এখানে ইহা স্পষ্ট যে, মনুর বিচার এবং মূল রচনা বেদানুকুল। তিনি বেদের আধারেই উপদেশ করেছেন। কিন্তু যদি মনুস্মৃতিতে বেদ বিরুদ্ধ কোন উপদেশ পাওয়া যায় , অবশ্যই তাহা প্রক্ষিপ্ত জানবে। কারন মনু বেদের বাহিরে গিয়ে কোন উপদেশ করেন নি। কিছু স্বর্থান্বেষী তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাদের মনগড়া শ্লোক সংযোজন করেছেন। যা সম্পূর্ণই ভ্রান্ত এবং বেদ বিরুদ্ধ। . অতএব মহর্ষি মনুর মত অনুসারে, বর্ণব্যবস্থা জন্মগত নয়। ইহা গুন, কর্ম এবং স্বভাব জাত। নিম্ন জাত বলে কাউকো হেয় করা নয়। বরং তাদেরকে সম্মান করা। বাস্তবিক ইহাই তো ধর্ম। মহর্ষি মনুর তো ইহাই চরম সিদ্ধান্ত। তাই তো তিনি বলেছেন- যাহাতে ধর্ম রক্ষা হয়, এমত যত্ন করিবে। জগতে ধর্ম হতে শ্রেষ্ঠ আর কিছু নাই। (মনুঃ ৮।১৭)

क्षत्राय त्वं श्रवसे त्वं महीया इष्टये त्वमर्थमिव त्वमित्यै। 
फिर उसी विषय को अगले मन्त्र में कहा है ।
विसदृशा जीविताभिप्रचक्ष उषा अजीगर्भुवनानि विश्वा ॥
-ऋग्वेद  मण्डल:1 सूक्त:113 मन्त्र:6


अन्वय:
हे विद्वन् सभाध्यक्ष राजन् यथोषा स्वप्रकाशेन विश्वाभुवनान्यजीगस्तथा त्वमभिप्रचक्षे क्षत्राय त्वं श्रवसे त्वमिष्टये महीयै त्वमित्यै विसदृशाऽर्थमिव जीविता सदा साध्नुहि ॥ ६ ॥
पदार्थान्वयभाषाः -हे विद्वन् सभाध्यक्ष राजन् ! जैसे (उषाः) प्रातर्वेला अपने प्रकाश से (विश्वा) सब (भुवनानि) लोकों को (अजीगः) ढाँक लेती है (त्वम्) तू (अभिप्रचक्षे) अच्छे प्रकार शास्त्र-बोध से सिद्ध वाणी आदि व्यवहाररूप (क्षत्राय) राज्य के लिये और (त्वम्) तू (श्रवसे) श्रवण और अन्न के लिये (त्वम्) तू (इष्टये) इष्ट सुख और (महीयै) सत्कार के लिये और (त्वम्) तू (इत्यै) सङ्गति प्राप्ति के लिये (विसदृशा) विविध धर्मयुक्त व्यवहारों के अनुकूल (अर्थमिव) द्रव्यों के समान (जीविता) जीवनादि को सदा सिद्ध किया कर ॥ 

भावार्थभाषाः -इस मन्त्र में वाचकलुप्तोपमालङ्कार है। जैसे विद्या विनय से प्रकाशमान सत्पुरुष सब समीपस्थ पदार्थों को व्याप्त होकर उनके गुणों के प्रकाश से समस्त अर्थों को सिद्ध करनेवाले होते हैं, वैसे राजादि पुरुष विद्या न्याय और धर्मादि को सब ओर से व्याप्त होकर चक्रवर्त्ती राज्य की यथावत् रक्षा से सब आनन्द को सिद्ध करें ॥ ६ ॥स्वामी दयानन्द सरस्वती

একজন জ্ঞানের উচ্চ পথে
(ব্রাক্ষ্মন) ,অপরজন বীরত্বের গৌরবে (ক্ষত্রিয়)একজন তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে (পেশাভিত্তিক), আরেকজন সেবার পরিশ্রমে(শূদ্র)। সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায় ,সকলের জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত।
नानानं वा उ नो धियो वि व्रतानि जनानाम् । तक्षा रिष्टं रुतं भिषग्ब्रह्मा सुन्वन्तमिच्छतीन्द्रायेन्दो परि स्रव ॥

ऋग्वेद 0 मण्डल:9 सूक्त:112 मन्त्र:1 


अब प्रसङ्गप्राप्त गुणकर्मानुसार वर्णों के धर्मों का वर्णन करते हैं।

पदार्थान्वयभाषाः -(नः) हमारे (धियः) कर्म (नानानं) भिन्न-भिन्न प्रकार के होते हैं, (वै) निश्चय करके (ऊँ) अथवा (जनानां) सब मनुष्यों के (व्रतानि) कर्म (वि) विविध प्रकार के होते हैं। (तक्षा) “तक्षतीति तक्षा”=लकड़ी गढ़नेवाला पुरुष (रिष्टं) अपने अनुकूल लकड़ी की (इच्छति) इच्छा करता है, (भिषक्) वैद्य (रुतं) रोगचिकित्सा की इच्छा करता है, (ब्रह्मा) वेदवेत्ता पुरुष (सुन्वन्तं)वेदविद्या से संस्कृत पुरुष की इच्छा करता है, इसलिये (इन्दो) हे प्रकाशस्वरूप परमात्मन् ! आप (इन्द्राय) “इन्दतीति इन्द्रः”=जो अपने न्यायादि नियमों से राजा बनने के सद्गुण रखता है, उसी को (परि, स्रव) राजसिंहासन पर अभिषिक्त करें ॥
भावार्थभाषाः -इस मन्त्र का अभिप्राय यह है कि जिस प्रकार पुरुष अपने अनुकूल पदार्थ को सुसंस्कृत करके बहुमूल्य बना देता है, इसी प्रकार राज्याभिषेकयोग्य राजपुरुष को परमात्मा संस्कृत करके राज्य के योग्य बनाता है 

এই মন্ত্রটির অর্থ হ'ল মানুষ যেমন তার অনুকূল পদার্থকে সংস্কৃতি দেয় এবং এটিকে মূল্যবান করে তোলে তেমনিভাবে রাজ্যাভিষেকের রাজত্বকে সংস্কৃত দ্বারা সার্বভৌমকে রাজ্যের যোগ্য করে তোলে।ঋগবেদ ৯.১১২.১सोमा असृग्रमिन्दवः सुता ऋतस्य सादने । इन्द्राय मधुमत्तमाः ॥
ऋग्वेद  मण्डल:9 सूक्त:12 मन्त्र:1 
पदार्थान्वयभाषाः - (इन्द्राय) जीवात्मा के लिये (मधुमत्तमाः) जो अत्यन्त आनन्दमय परमात्मा है (ऋतस्य) यज्ञ की (सादने) स्थिति में जो (सुताः) उपास्य समझा गया है, वह (इन्दवः) प्रकाशस्वरूप (सोमाः) सौम्यस्वभाववाला है (असृग्रम्) उसी के द्वारा यह संसार रचा गया है ॥१॥
भावार्थभाषाः -जो सब प्रकार की सच्चाईयों का एकमात्र अधिकरण है और जिससे वसन्तादि यज्ञरूप ऋतुओं का परिवर्तन होता है, वही परमात्मा इस निखिल ब्रह्माण्ड का अधिपति है ॥१॥
একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেক রকম আর সে অনুসারে কেউ ব্রাক্ষ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য কেউ শূদ্র।
.
ব্রাক্ষ্মন কে?
ঋগবেদ ৭.১০৩.৮
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস, সৎ, নিষ্ঠাবান, সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে ব্রাক্ষ্মণ।
শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্ৰাহ্মণশ্চেতি শূদ্ৰতাম্ । ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবস্তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাত্তথৈব চ।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দশ_শ্লোক_65 অনুবাদ-- যদি কেউ শূদ্র কূলে উৎপন্ন হয়ে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যর,গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হয় তবে সে, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্য হবে। সেইরূপ, কেউ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যকূলে জন্মগ্রহণ করে শূদ্রের গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হলে সে শুদ্র হবে। অর্থাৎ,চার বর্ণের মধ্যে যে,যে বর্ণের সদৃশ হবে,সে সেই বর্ণেরই হবে।
অধ্যাপনমধ্যয়নং য়জনং য়াজনং তথা। দানং প্রতিগ্রহশ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ।। মনুস্মৃতি ১/৮৮ শ্লোক অনুবাদ : অধ্যয়ন , অধ্যাপনা , যজ্ঞ করা ও করানো , দান দেওয়া এবং দান গ্রহণ করা এই ছয়টি ব্রাহ্মণের কর্ম শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্ৰাহ্মণশ্চেতি শূদ্ৰতাম্ । ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবস্তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাত্তথৈব চ।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দশ_শ্লোক_65 অনুবাদ-- যদি কেউ শূদ্র কূলে উৎপন্ন হয়ে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যর,গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হয় তবে সে, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্য হবে। সেইরূপ, কেউ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যকূলে জন্মগ্রহণ করে শূদ্রের গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হলে সে শুদ্র হবে। অর্থাৎ,চার বর্ণের মধ্যে যে, যে বর্ণের সদৃশ হবে,সে সেই বর্ণেরই হবে। স্বাধ্যায়েন ব্রতৈহোমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যয়া সুতৈঃ। মহাযজ্ঞৈশ্চ যজৈশ্চ ব্রাহ্মীয়ং ক্রিয়তে তনুঃ।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_28 অনুবাদ----বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা,হোম ও পঞ্চ মহাযজ্ঞ পালন, ধর্ম অনুসারে সন্তান উৎপাদন ইত্যাদি দ্বারা এই শরীর ব্রাহ্মণের করা যায়। এবার দেখুন মনু স্মৃতি অনুযায়ী ব্রাহ্মণের কাজ কি কি এবং তা পালন না করার শাস্তি------- অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা। দানং প্রতিগ্ৰহঞ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_প্রথম_শ্লোক_88 অনুবাদ-বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা,যজন, যাজন,দান ও প্রতিগ্ৰহ হল ব্রাহ্মণদের কাজ। যোহনধীত্য দ্বিজো বেদমন্যত্র কুরুতে শ্রমম্। স জীবন্নেব শূদ্রত্বমাশু গচ্ছতি সান্বয়ঃ।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_168 অনুবাদ---যে ব্রাহ্মণ আদি তিন বর্ণ, বেদ অধ্যয়ন না করে অন্যান্য অর্থশাস্ত্র স্মৃতিশাস্ত্র প্রভৃতিতে অত্যন্ত যত্ন করেন তিনি জীবিত অবস্থাতেই অতি শীঘ্র শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন। ব্রাহ্মণদের প্রধান কাজ বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা। কাঁধে পৈতে থাকলেই কেউ ব্রাহ্মণ হয় না। দেখুন মনু স্মৃতিতে কি বলা হয়েছে------ যথা কাষ্ঠময়ো হস্তী যথা চর্মময়ো মৃগঃ। যশ্চ বিপ্রোহনধীয়ানস্ত্রয়স্তে নাম বিভ্রতি।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_157 অনুবাদ--যেমন কাঠের তৈরি হাতি ও চামড়ার তৈরি মৃগ অকেজো ও অসার তেমনি যে ব্রাহ্মণ বেদ অধ্যয়ন করেন না, তিনিও অপ্রয়োজনীয় ও অসার!! যথা ষন্ডোহফলঃ স্ত্রীষু যথা গৌর্গবি চাফলা। যথা চাজ্ঞেহফলং দানং তথা বিপ্রোহনৃচোহফলঃ।। মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_158 অনুবাদ--নপুংসক যেমন কোনও স্ত্রীলোকের কাছে অকেজো, একটি স্ত্রী জাতীয় গরু যেমন অন্য একটি স্ত্রী জাতীয় গরুতে নিষ্ফল এবং অজ্ঞ ব্যক্তিকে দান যেমন বিফল হয় তেমনি অনৃচ অর্থাৎ বেদ অধ্যয়ন বর্জিত ব্রাহ্মণও অচল বা অকেজো। ব্রাহ্মণত্ত্ব যে, জন্মগত নয়,গুণ ও কর্মগত এই বিষয়ে গীতার প্রমাণ দেখুন---- চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ। তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্।। •গীতা_জ্ঞানযোগ_শ্লোক_ 13 বঙ্গানুবাদ--- (আমি)গুণ ও কর্ম অনুযায়ী চারটি বর্ণের সৃষ্টি করেছি। কিন্তু চার বর্ণের স্রষ্টা হলেও আমি আসক্তিহীন। আমাকে অকর্তা বলেই জানবে। ব্রাহ্মণ হলেন,সাত্ত্বিক গুণ বিশিষ্ট। গীতার,ষোড়শ অধ্যায়ের,1-2-3 শ্লোকে সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের মধ্যে যে, ছাব্বিশটি গুণ দেখা যায়, তার বর্ণনা আছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান গুণ হল,বেদপাঠ ও যজ্ঞ। প্রমাণ দেখুন----- অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধিজ্ঞান যোগব্যবস্থিতিঃ। দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জবম্।। গীতা_দৈবসুরসম্পদ্বিভাগযোগঃ_ শ্লোক_1 বঙ্গানুবাদ---1.ভয় না পাওয়া 2. অকুটিলতা 3.জ্ঞান 4.লব্ধ জ্ঞানের আচরণে নিষ্ঠা 5.দান 6.বাহ্য ইন্দ্রিয়ের দমন 7.যজ্ঞ 8.বেদের অধ্যয়ন 9. তপস্যা 10.সরলতা। বিশ্লেষণ-- পৌরাণিক ব্রাহ্মণেরা,শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং ঈশ্বর ভাবেন। কিন্তু, শ্রীকৃষ্ণের বাণী মানেন না!! বেদপাঠ ও যজ্ঞ কোন ব্রাহ্মণই করেন না।সাত্ত্বিক গুণও তাঁদের নেই। কিন্তু, মূর্তি পূজার মত, তামসিক কাজ করেন, শ্রীকৃষ্ণের বাণীকে অবহেলা করে। প্রমাণ দেখুন----- যৎ তু কৃৎস্নবদেকস্মিন্ কার্যে সক্তমহৈতুকম্। অতত্ত্বার্থবদল্পঞ্চ তৎ তামসমুদাহৃতম্।। •গীতা_মোক্ষযোগঃ_শ্লোক_22 বঙ্গানুবাদ_ যে জ্ঞান একটি মাত্র কার্যে অর্থাৎ দেহ বা প্রতিমায় সমগ্ররূপে আসক্ত অর্থাৎ যে জ্ঞান, কোন প্রতিমাকে সর্বস্বরূপ ব্রহ্মজ্ঞান করে,যা, অহৈতুক অর্থাৎ অযৌক্তিক,অতত্ত্বার্থবৎ অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞানরহিত এবং অল্প,সে জ্ঞান তামস বলে কথিত হয়। বেদের প্রমাণ কারুরহং ততো ভিষগুপলপ্রক্ষিণী নানা। নানাধিয়ো বসূযবোহনু গা ইব তস্থিমেন্দ্রায়েন্দো পরি স্রব।। ••ঋগ্বেদ_মন্ডল_9_সূক্ত_112_মন্ত্র_3 ••রমেশচন্দ্র দত্তের, আক্ষরিক অনুবাদ--- দেখ আমি,স্তোত্রকার পুত্র চিকিৎসক ও কন্যা পাথরের ওপর যব ভাঙ্গে। আমরা সকলে ভিন্ন ভিন্ন কর্ম করছি। ব্যাখ্যা_ স্তোত্রকার অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, চিকিৎসক অর্থাৎ বৈশ্য ও যব ভাঙ্গার কাজ অর্থাৎ শূদ্র। এই মন্ত্রে স্পষ্ট প্রমান পাওয়া যাচ্ছে এক পরিবারের লোকেরা আলাদা পেশায় নিযুক্ত হত,যোগ্যতা অনুসারে। জন্ম অনুযায়ী নয়। ••ইমে যে নার্বাঙ্ ন পরশ্চরন্তি ন ব্রাহ্মণাসো ন সুতেকরাসঃ। ত এতে বাচমভিপদ্য পাপয়া সিরীস্তন্ত্রং তন্বতে অপ্রজজ্ঞয়ঃ।। ••ঋগ্বেদ_মন্ডল_10_সূক্ত_71_মন্ত্র_9 ••রমেশচন্দ্র দত্তের আক্ষরিক অনুবাদ--- যে সকল ব্যক্তি ইহকাল বা পরকাল কিছুই পর্যালোচনা করেনা, যারা স্তুতি প্রয়োগ বা সোমযাগ কিছুই করে না, তারা পাপযুক্ত অর্থাৎ দোষাশ্রিত ভাষা শিক্ষা করে, নির্বোধ ব্যক্তির মত কেবল লাঙ্গল চালনা করবার উপযুক্ত হয় অথবা তাঁতির কাজ করবার উপযুক্ত হয়। ব্যাখ্যা---- এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, যারা ইহকাল ও পরকাল পর্যালোচনা করত ও স্তুতি অভ্যাস ও সোম যাগ করত,তারাই স্তোত্রা(ব্রাহ্মণ) হত আর যারা ঐ ধর্ম ক্রিয়া সাধনে অসমর্থ তারা কৃষক বা তাঁতি হত। অর্থাৎ যোগ্যতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন কাজ ,জন্ম অনুসারে নয়। এইবার,বেদের যে মন্ত্রটি নিয়ে তথাকথিত নামধারী ব্রাহ্মণরা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদের পুরুষসূক্তের,সেই বিখ্যাত মন্ত্রটি ও তার পূর্ব মন্ত্রটির ব্যাখ্যা করা হল----- যত্ পুরুষং ব্যদধুঃ কতিধা ব্যকল্পয়ন্। মুখং কিমস্যাসীত্ কিং বাহূ কিমূরূ পাদা উচ্যেতে।।10 ব্রাহ্মণোহস্য মুখমাসীদ্ বাহূ রাজন্যঃ কৃতঃ। ঊরূ তদস্য যদ্ বৈশ্যঃ পদ্ভাং শূদ্রো অজায়ত।।11 যজুর্বেদ_অধ্যায়_31_মন্ত্র_10-11 ঋগ্বেদ_মন্ডল_10_সূক্ত_90_মন্ত্র_11-12 ••অনুবাদ--(আচার্য সত্যব্রত সামশ্রমী)--- যাঁহাকে পুরুষ বলিয়া বিধান করা হইল, তিনি কি কি প্রকারে কল্পিত হইলেন?----- ইঁহার মুখ কি? বাহুদ্বয়ই বা কি? এবং কোন বস্তুই বা পাদদ্বয়রূপে কথিত হইয়া থাকে?(10) বাহ্মণগণ ইঁহার মুখ রূপে কল্পিত হন, রাজন্য জাতি দ্বারাই ইঁহার বাহুদ্বয় কল্পিত,আরএই যে বৈশ্য জাতি ইহারাই উরূদ্বয়- স্থানীয় এবং পাদদ্বয় হইতেই শূদ্রের উৎপত্তি। আচার্য সত্যব্রত সামশ্রমী'র ব্যাখ্যা---- পূর্ব মন্ত্রে(31/10)কোন বস্তুই বা পাদদ্বয়রূপে কথিত হয়ে থাকে,এই প্রশ্ন থাকায় এবং পরবর্তী মন্ত্রে(31/11) ব্রাহ্মণাদি মুখাদিরূপে কল্পনীয় এই উক্তি থাকায়,এই মন্ত্রের শেষভাগে অর্থাৎ পাদদ্বয় হতে শূদ্রের উৎপত্তি এই অংশটুকুরও ঐ অনুসারে ব্যাখ্যা কর্তব্য। সুতরাং, শূদ্র তাঁর পাদদ্বয়রূপে কল্পিত হয়, এটাই প্রকৃত অর্থ বলে বুঝতে হবে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কৃত----- (সত্যার্থ প্রকাশ_চতুর্থ সমুল্লাস)-------- এখানে "পুরুষ" অর্থাৎ নিরাকার ব্যাপক পরমাত্মার অনুবৃত্তি রয়েছে।পরমাত্মা নিরাকার বলে তাঁর মুখাদি অঙ্গ হতে পারে না। অতএব এই মন্ত্রের অর্থ এই যে------ যিনি(অস্য) পূর্ণ ব্যাপক পরমাত্মার সৃষ্টিতে মুখের ন্যায় সকলের মধ্যে মুখ্য বা শ্রেষ্ঠ তিনি (ব্রাহ্মণঃ)"ব্রাহ্মণ"। "বাহুবৈ বলং বাহুবৈ বীর্য্যম্"(শতপথ ব্রাহ্মণ_6/3/2/35)। বল বীর্যের নাম বাহু। যার মধ্যে বল-বীর্য বেশি তিনি(রাজন্যঃ) ক্ষত্রিয় । যিনি পদার্থের সংগ্ৰহের জন্য সকল দেশে ঊরূবলে গমন করেন তিনি(বৈশ্যঃ) "বৈশ্য"। আর, যে ব্যক্তি পায়ের মত মূর্খতাদি দুর্গুণ বিশিষ্ট,সেই ব্যক্তি "শূদ্র"। যদি মুখাদি অঙ্গ হতে, বাহ্মণ উৎপন্ন হত তবে তাদের আকৃতি, উপাদান কারণের মত হত। যে রূপ মুখের আকার সেইরূপ ব্রাহ্মণদের আকার হত। বৈশ্যদের, ঊরুর মত আকার হত এবং শূদ্রদেরর পায়ের মত আকার হওয়া উচিত ছিল!!! কিন্তু তা হয় না। যদি কেউ যুক্তি দেখায়, যারা মুখাদি হতে উৎপন্ন হয়েছিল তাদের সংজ্ঞা ব্রাহ্মণ হোক কিন্তু সেই যুক্তিও অনর্থক। কেননা সব মানুষই নিজের মায়ের গর্ভাশয় হতেই উৎপন্ন হয়। (মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ব্যাখ্যা অতি উত্তম। আধুনিককালেও, মুখ বলতে প্রধানকেও বোঝান হয়। যেমন, বিজেপির মুখ বললে নরেন্দ্র মোদির কথাই মনে আসে বা পতঞ্জলির মুখ, রামদেব। পরমাত্মা নিরাকার।এই বিষয়ে প্রমাণ এই পোষ্টের শেষে দেওয়া হল।) তৃতীয় ব্যাখ্যা---- অধ্যাপনা প্রভৃতি কাজ ব্রাহ্মণের মুখসাধ্য তাই ব্রাহ্মণকে পরমাত্মার মুখ থেকে উৎপন্ন বলে কল্পনা করা হয়েছে। ক্ষত্রিয়ের কাজ বাহুসাধ্য যুদ্ধ তাই ক্ষত্রিয়কে পরমাত্মার হাতরূপে কল্পনা করা হয়েছে। বৈশ্যের কাজ ঊরুর ওপর নির্ভর।কারণ, পশু রক্ষা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতির জন্য বিভিন্ন স্থানে গমন ঊরুর শক্তির উপর নির্ভর করে। তাই বৈশ্যকে পরমাত্মার ঊরুরূপে কল্পনা করা হয়েছে। অধ্যাপনা,প্রশাসন ও বাণিজ্য ছাড়াও অনেক প্রকার কাজ আছে সমাজে,যা শূদ্রদের কাজ বা নিম্ন ভাগের কাজ। আবার,পায়ের উপর যেমন গোটা দেহ দাঁড়িয়ে থাকে,ঠিক তেমন সমাজে মানুষের জীবন ও ধর্মকে স্থায়ী হতে হলে,শূদ্র-রূপ শক্ত পায়ের প্রয়োজন। {পরমাত্মা নিরাকার। সুতরাং,এই মন্ত্রটি আক্ষরিক অর্থ করলে বেদ বিরোধী অনুবাদ করা হবে। পরমাত্মা যে নিরাকার তার প্রমাণ------- স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণ- মস্নাবিরং শুদ্ধপাপবিদ্ধম্। কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূ- র্যাথাতথ্যতোহর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।। ঈশোপনিষদ:মন্ত্র:8 যর্জুবেদ:অধ্যায়_ 40,মন্ত্র নং_8 ব্যাখ্যা:(অন্বয়)------ সঃ(সেই পরমাত্নাই), পর্যগাৎ ( সর্বত্র গিয়েছেন অর্থাৎ সর্বব্যাপী), [সঃ] (তিনিই), শুক্রম্ (জ্যোর্তিময়), অকায়ম্(শরীরহীন), অব্রণম্ (ক্ষতহীন), অস্নাবিরং (স্নায়ু বা শিরাবিহীন), শুদ্ধম্(পবিত্র), অপাপবিদ্ধম (পাপ দ্বারা অবিদ্ধ বা ধর্ম অধর্মাদি রহিত), কবিঃ(ক্রান্তদর্শী), মনীষী(সর্বজ্ঞ),পরিভূঃ (সর্বোপরি বিদ্যমান),স্বয়ম্ভূঃ (নিজেই নিজের কারণ),[সঃ] (তিনি), শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ (নিত্যকাল ধরে), [সংবৎসরাখ্য প্রজাপতিদের জন্য], অর্থান্( বিষয় সমূহ বা কর্তব্য পদার্থসমূহ), যাথা-তথ্যতঃ(লোকের যথাযথ কর্মফল ও সাধনা অনুসারে), ব্যদধাৎ(বিধান করেছেন)। অনুবাদ----- তিনি অর্থাৎ পরমাত্মা, সর্বব্যাপী,জ্যোতির্ময় ও অশরীরী(অশরীর শব্দে পরমাত্মার লিঙ্গ শরীরের নিষেধ) ক্ষতরহিত,শিরাহীন, স্নায়ুহীন,(ক্ষতরহিত ও শিরাহীন শব্দে, স্থূল শরীরের নিষেধ), নির্মল (নির্মল শব্দে,কারণ শরীরের নিষেধ করা হল) ও অপাপবিদ্ধ।তিনি, সর্বদর্শী,সর্বজ্ঞ, সর্বোপরি বিদ্যমান ও স্বয়ম্ভূ।পরমাত্না, চিরকাল ধরে, লোকের যথাযথ কর্মফল অনুসারে কর্তব্য বিধান করছেন}
স্বাধ্যায়েন ব্রতৈহোমৈস্ত্রৈবিদ্যেনেজ্যয়া সুতৈঃ।
মহাযজ্ঞৈশ্চ যজৈশ্চ ব্রাহ্মীয়ং ক্রিয়তে তনুঃ।।
মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_28
অনুবাদ----বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা,হোম ও পঞ্চ মহাযজ্ঞ পালন, ধর্ম অনুসারে সন্তান উৎপাদন ইত্যাদি দ্বারা এই শরীর ব্রাহ্মণের করা যায়।
এবার দেখুন মনু স্মৃতি অনুযায়ী ব্রাহ্মণের কাজ কি কি এবং তা পালন না করার শাস্তি-------
অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।
দানং প্রতিগ্ৰহঞ্চৈব ব্রাহ্মণানামকল্পয়ৎ।।
মনুস্মৃতি_অধ্যায়_প্রথম_শ্লোক_88
অনুবাদ-বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা,যজন, যাজন,দান ও প্রতিগ্ৰহ হল ব্রাহ্মণদের কাজ।
যোহনধীত্য দ্বিজো বেদমন্যত্র কুরুতে শ্রমম্।
স জীবন্নেব শূদ্রত্বমাশু গচ্ছতি সান্বয়ঃ।।
মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_168
অনুবাদ---যে ব্রাহ্মণ আদি তিন বর্ণ, বেদ অধ্যয়ন না করে অন্যান্য অর্থশাস্ত্র স্মৃতিশাস্ত্র প্রভৃতিতে অত্যন্ত যত্ন করেন তিনি জীবিত অবস্থাতেই অতি শীঘ্র শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন।
ব্রাহ্মণদের প্রধান কাজ বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা। কাঁধে পৈতে থাকলেই কেউ ব্রাহ্মণ হয় না।
দেখুন মনু স্মৃতিতে কি বলা হয়েছে------
যথা কাষ্ঠময়ো হস্তী যথা চর্মময়ো মৃগঃ।
যশ্চ বিপ্রোহনধীয়ানস্ত্রয়স্তে নাম বিভ্রতি।।
মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_157
অনুবাদ--যেমন কাঠের তৈরি হাতি ও চামড়ার তৈরি মৃগ অকেজো ও অসার তেমনি যে ব্রাহ্মণ বেদ অধ্যয়ন করেন না, তিনিও অপ্রয়োজনীয় ও অসার!!
যথা ষন্ডোহফলঃ স্ত্রীষু যথা গৌর্গবি চাফলা।
যথা চাজ্ঞেহফলং দানং তথা বিপ্রোহনৃচোহফলঃ।।
মনুস্মৃতি_অধ্যায়_দ্বিতীয়_শ্লোক_158
অনুবাদ--নপুংসক যেমন কোনও স্ত্রীলোকের কাছে অকেজো,
একটি স্ত্রী জাতীয় গরু যেমন অন্য একটি স্ত্রী জাতীয় গরুতে নিষ্ফল এবং অজ্ঞ ব্যক্তিকে দান যেমন বিফল হয় তেমনি অনৃচ অর্থাৎ বেদ অধ্যয়ন বর্জিত ব্রাহ্মণও অচল বা অকেজো।

ক্ষত্রিয় কে?
ঋগ্বেদ ১০.৬৬.৮
দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সৎ কর্ম দ্বারা শুদ্ধধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস, ঈশ্বর সাধক,সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ণ,বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।
.
বৈশ্য কে?
অথর্ববেদ ৩.১৫.১
দক্ষ ব্যবসায়ী, দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী।
.
শূদ্র কে?
ঋগ্বেদ ১০.৯৪.১১
যে অদম্য,পরিশ্রমী, অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।
এ হচ্ছে নির্ভেজাল যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থা। যেমনভাবে এখনকার সময়ে ডিগ্রী প্রদান করা হয়, যজ্ঞোপবীত দেয়া হতো বৈদিক নিয়ম অনুসারে। তাছাড়া, আচরণবিধির সাথে অসম্মতি ঘটলে যজ্ঞোপবীত নিয়ে নেয়া হতো বর্ণগুলোর। ডাক্তার এর ছেলে যেমন ডাক্তার হবেই এমন কোন কথা নেই। ডাক্তার এর ঘরে জন্ম নিলেই MBBS এর সার্টিফিকেট যেমন পাওয়া যায়না ঠিক তেমন ব্রাহ্মন এর ঘরে জন্ম নিলেই ব্রাহ্মন হওয়া যায়না। বৈদিক বর্নাশ্রম ও একই। বৈদিক ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে এ ধরনের-
(ক) ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রাহ্মণ এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রাহ্মণকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য।
(খ) ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)
(গ) সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজনব্রাহ্মণ হন।
(ঘ) প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। পরবর্তীতে তিনি তপস্যা দ্বারা মোক্ষলাভ করেন প্রায়ঃশ্চিত্তে র পরে। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৪) যদি তপস্যা শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হতো যেমনভাবে উত্তর রামায়ণের নকল গল্প বলে, তাহলে প্রীষধ কিভাবে তা করল?
(ঙ) নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩)
(চ) ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)
(ছ) তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩)
(জ) ভাগবত অনুসারে অগ্নিবেশ্য ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি জন্মনেন এক রাজার ঘরে।
(ঝ) রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভাগবত অনুযায়ী।
(ঞ) হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)
(ট) শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১) এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।
(ঠ) মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।
(ড) রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যেরঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।
(ঢ) প্রবৃদ্ধ ছিলেন রাজা রঘুর পুত্র কিন্তু পরে রাক্ষস হন।
(ণ) ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন।
(ত) বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।
(থ) বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।
“শূদ্র” শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতে অনুনোমোদিত , অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত।
বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতে বোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্ – যজুর্বেদ ৩০.৫) একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের ঘোষনা দিয়েছে মানব সভ্যতার কাঠামো হিসেবে। এজন্যেই পবিত্র বেদ ঘোষনা করেছে সাম্যের বানী-
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায় যুবা পিতা স্বপা রুদ্র এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥
(ঋগবেদ ৫.৬০.৫)
বঙ্গানুবাদ : কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন, কেউ ক্ষত্রিয়, কেউ বৈশ্য,কেউ শুদ্র।তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়।ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে ।ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি।পুরুষার্থী সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।

এই প্রবন্ধটি পড়ার পর পাঠকেরাই ঠিক করুন যে ভারতীয় সংবিধান ও মনুস্মৃতি— এই দুটোর মধ্যে তারা কী বেছে নেবেন।
অধিকাংশ পাঠকই হয়তো মনে করেন যে, মনুস্মৃতি জাতিভেদ প্রথাকে সমর্থন করে। তাদের ধারণা এতে বলা হয়েছে যে, ব্রাহ্মণ শূদ্রের থেকে শ্রেষ্ঠতর। জাতিভেদ প্রথাকে সমর্থনকারী এই সমস্ত গ্রন্থকে পুড়িয়ে ফেলার কথাও হয়তো অনেকে বলবেন। আমরা এই ব্যাপারটাই অনুসন্ধান করে দেখব যে সাধারণ মানুষের ধারণা, মনুস্মৃতি জাতপাতকে সমর্থন করে—এটা ঠিক কিনা।
ঊনবিংশ শতকের বিখ্যাত বৈদিক পণ্ডিত স্বামী দয়ানন্দ লিখছেন, “যে অংশটি প্রক্ষিপ্ত (পরবর্তীকালে সংযোজিত) নয়, সেটি বেদের সঙ্গে একই মত পোষণ করে।” তার অভিমত হলো যে, যে মনুস্মৃতিটি আমরা বর্তমানে পড়ি যেটি স্বয়ম্ভু মনু লিখেছিলেন তা পুরোপুরি সে অবস্থায় পাওয়া যায় না। বর্তমান গ্রন্থটিতে স্ববিরোধিতা ও বৈদিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কিছু কথা কথা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। যে সমস্ত জায়গায় মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে কাউকে কাউকে হীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলোকে তিনি বাতিল করেছেন।
প্রকৃত সত্য হলো যে, মনু বর্ণ ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছিলেন— যা ঠিক হবে ব্যক্তি বিশেষের গুণের ওপর, তার জন্মের ওপর নয়। নীচে মনুস্মৃতির কিছু শ্লোকের অর্থ দেওয়া হলো— যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে জন্মসূত্রে নয়, যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে বর্ণ নির্ধারিত হতো। ২.১৫৭-যেমন কাঠের তৈরি হাতি ও চামড়ার তৈরি মৃগ অকেজো ও অসার, তেমনি যে ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন করেন না, তিনিও অপ্রয়োজনীয় ও অসার; ওই তিনটি পদার্থ কেবলমাত্র ওই সমস্ত নাম ধারণ করে (অর্থাৎ নামের যোগ্য প্রয়োজন নির্বাহ তারা করে না)। ২.২৮-বেদধ্যয়ন, ব্রত পালন, যজ্ঞে নৈবেদ্য প্রদান, পবিত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন, ত্রিস্তরীয় বিজ্ঞান অধিগত করা, ভগবান, ঋষি ও পিতৃলোকের তর্পণ করা, গৃহস্থ অবস্থায় সন্তান উৎপাদন, বিভিন্ন মহাযজ্ঞ সম্পাদন, সৌত্র আচার পালন প্রভৃতির মাধ্যমে এই মানব শরীর ব্রহ্মের সঙ্গে মিলনের উপযুক্ত হয়। ওপরের দুটি শ্লোকেই এই বিষয়টির ওপরর জোর দেওয়া হয়েছে যে, শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ পিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই কেউ ব্রাহ্মণ হয় না; কিছু বিশেষ কাজ তাকে করে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়।
কোনো মানুষের বর্ণ (জাতি বা সমাজে অবস্থান) নির্ধারিত হতো তার শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার পর।
বৈদিক যুগে একজন মানুষ দু’বার জন্মগ্রহণ করে বলে বিশ্বাস করা হতো। প্রথম, যখন সে তার পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করত। দ্বিতীয়, যখন সে তার শিক্ষা সম্পূর্ণ করত। দ্বিতীয় জন্মের (দ্বিজ) পর সেই ব্যক্তির বর্ণ নির্ধারণ করা হতো।
মনুস্মৃতির নীচে উল্লিখিত শ্লোকগুলি ব্যাপারটিকে আরও পরিষ্কার করবে— ২.১৪৮-কিন্তু সেই নবজন্ম যা সমস্ত বৈদিক সাহিত্যে পারদর্শী, আচার্য শাস্ত্র অনুসারে তাকে (ছাত্রকে) দেন সবিতৃর সাহায্যে (গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা), সেই জন্মই প্রকৃত এবং বয়স ও মৃত্যুরহিত। ২.১৪৬- জন্মদাতা পিতা এবং বেদের জ্ঞানদানকারী পিতা— এই দুজনের মধ্যে দ্বিতীয় জনই অধিকতর শ্রদ্ধার অধিকারী পিতা; কারণ বেদের জ্ঞানপ্রাপ্তির দ্বারা যে দ্বিতীয় জন্ম হয় তা শাশ্বত—ইহলোক ও পরলোক উভয় স্থানেই।
যে ব্যক্তি অশিক্ষিত থাকতেন ও বৈদিক জ্ঞান অর্জন করতেন না তাকেই শূদ্র বলা হতো। সুতরাং শূদ্র বর্ণ জন্মের ওপর ভিত্তি করে নয়— কর্মের ওপর ভিত্তি করে স্থির হতো। ১০.৪-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের দু’বার জন্ম (শিক্ষাগ্রহণ) হয়, কিন্তু চতুর্থ বর্ণ শূদ্রের জন্ম হয় মাত্র একবার, কোনো পঞ্চম বর্ণ হয় না। ২.১৭২-যিনি বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষিত হননি, তিনি শূদ্রের ন্যায়। মনু তথাকথিত নিম্নবর্ণের কোনো মানুষকে অপমান করতেও নিষেধ করেছেন— ৪.১৪১-যাদের দেহে অতিরিক্ত অঙ্গ আছে বা যারা হীনাঙ্গ, যারা বিদ্যাহীন (অশিক্ষিত), যারা অত্যধিক বয়স্ক, যাদের রূপ বা সম্পদ নেই এবং যারা হীন বংশে জন্মে তাদের কখনো অপমান বা ব্যঙ্গ করবে না। তাহলে মনু কেন বর্ণ ব্যবস্থা শুরু করলেন ? ১.৩১-কিন্তু এই বিশ্বের সমৃদ্ধির জন্য তিনি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র বর্ণের সৃষ্টি করলেন সমাজরূপ দেহের যথাক্রমে মাথা, বাহু, জঙ্ঘা এবং পদ রূপে। (লক্ষণীয় যে, এখানে কিন্তু ভগবানের পদদ্বয় থেকে শূদ্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।) ১.৮৭-এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রক্ষার জন্য তিনি
(ঈশ্বর) সকলের জন্য পৃথক কর্তব্য স্থির করে দেন, যেমন কোনো দেহের ক্ষেত্রে মুখ, বাহু, জঙ্ঘা ও পদদ্বয় করে থাকে। ১.৯৮-ব্রাহ্মণদের জন্য তিনি স্থির করেছেন যে, শিক্ষাদান করা ও অধ্যয়ন করা, নিজের ও অপরের ভালোর জন্য ত্যাগ করা এবং দান গ্রহণ করা ও দান করা। ১.৮৯-ক্ষত্রিয়দের জন্য তার আদেশ হলো প্রজা রক্ষা করা, দান করা, অধ্যয়ন করা এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণতা থেকে বিরত থাকা। ১.৯০-শূদ্রের জন্য প্রভু একটিই পেশা ঠিক করে দিয়েছেন কোনো অসূয়া ছাড়া পূর্বোক্ত বর্ণগুলির শুশ্রুষা করা। যেসমস্ত মানুষের কোনো দক্ষতা বা জ্ঞান নেই মনু তাদেরই শূদ্র বলে মনে করেছেন। সুতরাং এই অদক্ষ ও অশিক্ষিত মানুষদেরই অন্যান্য দক্ষ, শিক্ষিত মানুষদের তত্ত্বাবধানে কাজ করার কথা মনু বলেছেন। আমরা বর্তমান যুগেও ঠিক এইভাবেই কাজ করি না কি?
মনু মানুষকে তার নিজের বর্ণ অতিক্রম করে ওপরের বর্ণে উত্তরণের প্রচেষ্টা করতে বলেছেন। ফলে বোঝা যায় এই বর্ণব্যবস্থা ছিল পরিবর্তনশীল এবং তা জন্ম নয়, কর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হতো। ১০.৬৫-এইভাবে একজন শূদ্র ব্রাহ্মণ হতে পারে, (একইভাবে) একজন ব্রাহ্মণ শূদ্রের পর্যায়ে নামতে পারে; এই একই জিনিস ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সন্তানদের ক্ষেত্রেও খাটে। ৯.৩৩৫-একজন শূদ্র যে পবিত্র, উৎকৃষ্টতরদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, বিনীত কথা বলে, ব্রাহ্মণদের শরণে থাকে সে উচ্চ বর্ণ লাভ করে তার গুণের জন্য। ৪.২২৫-একজন ব্রাহ্মণ যিনি সর্বদা উৎকৃষ্ট মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন ও নিকৃষ্টদের দূরে রাখেন তিনি হন অত্যন্ত সম্মাননীয়, আর যিনি ঠিক এর বিপরীতটা করেন তিনি শূদ্রের পর্যায়ে নেমে আসেন। আমরা তো এখনো বলে থাকি মানুষের সঙ্গীই তাকে ভালো বা খারাপ বানায়। ২.১০৩-কিন্তু তিনি যিনি সকালে পূজা করেন না, সন্ধ্যাতেও করেন না, সে একজন শূদ্রেরই ন্যায়, তাকে শূদ্রের মতোই সমস্ত রকম কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত ও আর্য (বিভিন্ন গুণাবলীর অধিকারী) হওয়ার অধিকারও কেড়ে নেওয়া উচিত। ২.১৬৮-একজন দু’বার জন্মগ্রহণ করা মানুষ (দ্বিজ) যিনি বেদ পড়েননি, কিন্তু অন্যান্য ঐহিক বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, তিনি তার জীবদ্দশাতেই শূদ্রের পর্যায়ে পতিত হন এবং তার পরবর্তীকালে তার বংশধররাও। ২.১২৬-যে ব্রাহ্মণ অভিবাদনের উত্তরে প্রত্যাভিবাদন জানান না, শিক্ষিত মানুষদের তাকে অভিবাদন জানানো উচিত নয়, তাকেও শূদ্রের পর্যায়ভুক্ত হিসাবেই ধরা উচিত। একজন শূদ্রও অন্যান্য বর্ণের লোকেদের শিক্ষা দিতে পারে। ২.১৩৮-একজন শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি তথাকথিত নিচু বর্ণের থেকেও শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে, নীচুতম বর্ণের থেকেও শ্রেষ্ঠ জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং নিজের থেকে নীচু বর্ণ থেকেও উত্তমা স্ত্রী বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে। ২.২৪১-আপৎকালে কোনো ব্রাহ্মণ ছাত্র ব্রাহ্মণেতর অধ্যাপকের কাছ থেকেও অধ্যয়ন করতে পারবে, আর যতদিন ওই অব্রাহ্মণ অধ্যাপকের কাছে অধ্যয়ন করবে, ততদিন অনুব্রজ্যারূপে শুশ্রুষা করা চলবে। উচ্চতর বর্ণের বিভিন্ন অধিকারও মনু অনেক ক্ষেত্রে শূদ্রদের দিয়েছেন। ২.১৩৬-ধন-সম্পদ, নিকট আত্মীয়, বয়স্ক মানুষ, বিভিন্ন ধর্মসম্মত কর্ম ও আচার পালন এবং বিদ্যা (বৈদিক জ্ঞান)-এই পাঁচটি সম্মানের কারণ; কিন্তু প্রত্যেকটির থেকে তার পরেরটি বেশি সম্মানের কারণ বলে জানবে। ২.১৩৭-এই পাঁচটি গুণের মধ্যে ওপরের তিনটি বর্ণের মানুষদের যত বেশি গুণ থাকবে, তিনি তত বেশি মান্য হবেন, আর শূদ্র নব্বই বছরের বেশি বয়স্ক হলে ব্রাহ্মণসহ সকলের মান্য হবেন। অর্থাৎ মনু এখানে শূদ্রদেরও মান্যতার কথা বলেছেন। ৩.১১৬-ব্রাহ্মণদের পর আত্মীয়স্বজন ও ভৃত্যরা খাবে এবং এর পরে অবশিষ্ট যা থাকবে তা গৃহস্থ ও তার স্ত্রী খাবেন। তো এখানে মনু গৃহস্থদের নির্দেশ দিয়েছেন ভৃত্যদের (মূলত যারা শূদ্র হতো) পরে খাদ্য গ্রহণ করতে। ৮.৩৩৫-সাধারণ মানুষের যেখানে এক কার্ষাপণ দণ্ড, সেরকম ক্ষেত্রে রাজার দণ্ড হবে ১০০০ কার্ষাপণ—এটাই স্মৃতিশাস্ত্রের বিধান। ৮.৩৩৭-৮.৩৩৮-চুরির ক্ষেত্রে চৌর্যের দোষ-গুণ সম্পর্কে অবহিত শূদ্রের পাপ হবে আট গুণ, বৈশ্যর ষোলো গুণ, ক্ষত্রিয়ের বত্রিশ গুণ এবং ব্রাহ্মণের ৬৪ গুণ বা ১০০ গুণ-অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে একই অপরাধ হলেও মনু উচ্চবর্ণের জন্য বেশি শাস্তির বিধান দিয়েছেন। এই লেখাটিতে সমাজ কাঠামো সম্পর্কে মনুর নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরা হলো। তাঁর কাছে শিক্ষিত মানুষের ব্যবহারিক ত্রুটি, একজন অশিক্ষিত মানুষের থেকে বেশি ক্ষমার অযোগ্য।
প্রাচীনকালে বর্ণব্যবস্থা পরিবর্তনের কিছু উদাহরণ— 

১। ঋষি ব্রহ্মার পুত্র মনু স্বয়ম্ভু নিজেই ব্রাহ্মণের পুত্র হয়েও ক্ষত্রিয় রাজায় পরিণত হন।
২। মনুর জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রিয়ব্রত একজন রাজা হন অর্থাৎ ক্ষত্রিয়ে পরিণত হন।
৩। মনুর দশ পুত্রের মধ্যে সাতজন রাজা হন এবং বাকি তিনজন ব্রাহ্মণ। তাদের নাম হলো মহাবীর, কবি ও শাওল (ভাগবত পুরাণ, নবম অধ্যায়)।
৪। কবস আইলুশ শূদ্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে ঋষি হয়ে যান। তিনি ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের বেশ কিছু সূক্ত রচনা করেছেন।
৫। জাবালার পুত্র সত্যকাম, যাঁর পিতৃপরিচয় অজ্ঞাত, তিনিও নিজের গুণবলে ঋষি হন।
৬। নীচু বর্ণে জন্মগ্রহণ করেও মাতঙ্গ ঋষি হন।
৭। নীচু বর্ণে জন্ম হলেও মহাঋষি বাল্মীকিও পরবর্তীকালে ঋষি হন।
৮। মহাত্মা বিদুর দাসীর সন্তান হয়েও রাজা ধৃতরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হন।
৯। রাজা বিশ্বনাথ যিনি ছিলেন একজন ক্ষত্রিয়, সাধনবলে তিনি ব্রাহ্মণ তিনি ব্রাহ্মণে পরিণত হন এবং ঋষি বিশ্বামিত্র হিসেবে পরিচিত হন।
একই রকম ভাবে বর্ণব্যবস্থায় পতিত হওয়ারও বহু উদাহরণ আছে—
১। ব্রাহ্মণ ঋষি পুলস্ত্যের পুত্র লঙ্কার রাজা রাবণ রাক্ষসে পরিণত হন।
২। শ্রীরামের পূর্বপুরুষ রাজা রঘুর পুত্র প্রবিধ গুণের অভাবের জন্য নিম্নতর বর্ণ হিসাবে ঘোষিত হন।
৩। শ্রীরামের পূর্বপুরুষ রাজা সমরের পুত্র অসমঞ্জস বিবিধ বাজে গুণের জন্য শূদ্র হিসাবে ঘোষিত হন।
এই আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে প্রকৃত, প্রাচীন মনুস্মৃতিতে গুণের বা কর্মের ওপর ভিত্তি করে বর্ণব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, জন্মের ওপর ভিত্তি করে নয়। পরবর্তীকালে সংযোজিত এই পুস্তকের অংশগুলি। তাই পরিত্যাজ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ